আজ ২৯ নভেম্বর, পঞ্চগড় হানাদারমুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি সেনাদের কবল থেকে পঞ্চগড়কে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত করেন। সেদিন শহরের ধ্বংসস্তূপের ওপর উড়ানো হয় স্বাধীন বাংলাদেশের লাল-সবুজ পতাকা এক স্মরণীয় মুহূর্ত যা আজও পঞ্চগড়বাসীর মনে অম্লান।
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ২৫ মার্চ সারাদেশে পাকসেনা আক্রমণ চালালেও পঞ্চগড় ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত মুক্ত ছিল। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে পাকিস্তানি বাহিনীর তীব্র আক্রমণের মুখে মুক্তিযোদ্ধারা কিছুটা পিছু হটে সদরের সি অ্যান্ড বি মোড়ে অবস্থান নেন। ১৭ এপ্রিল পাকবাহিনী পঞ্চগড় দখল করলে মুক্তিসেনারা তেঁতুলিয়ার মাগুরমারি অঞ্চলে সরে যান।
রাতের অন্ধকারে মুক্তিযোদ্ধারা চাওয়াই নদীর ব্রিজ ধ্বংস করে। ব্রিজ ভাঙার কারণে পাকিস্তানি সেনারা নদীর অপর পারে আটকে পড়ে। এতে করে জুলাই পর্যন্ত তেঁতুলিয়া মুক্তাঞ্চল হিসেবে থাকে।
পঞ্চগড় ছিল ৬ নম্বর সেক্টরের অধীনে। সাতটি কোম্পানিতে বিভক্ত প্রায় ৪০টি ইউনিট মুক্তিযোদ্ধা পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই চালায়। নভেম্বরের শুরু থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে পাকিস্তানি সেনারা ক্রমশ পিছু হটে শহরে আটকে পড়ে।
২০ নভেম্বর পাকসেনারা অমরখানা ঘাঁটি ত্যাগ করে শহরের দিকে পালায়। ২৬ নভেম্বর শহরের চারপাশে তিন ব্যাটালিয়ন ভারতীয় সেনা অবস্থান নেয়। ২৮ নভেম্বর শিংপাড়া, মলানি ও মিঠাপুকুর এলাকা দখলমুক্ত হয়। একই দিন শহরের সিও অফিস, আটোয়ারী ও মির্জাপুর মুক্ত হয়।
২৯ নভেম্বর সকাল ৮টার দিকে মুক্তিযোদ্ধারা শহরে প্রবেশ করেন। সাধারণ পোশাকে, মাথা ও কোমরে গামছা জড়িয়ে হাতে রাইফেল, স্টেনগান ও মর্টার বহন করে তারা ধ্বংসস্তূপের মধ্যে দিয়ে শহরে প্রবেশ করে। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্রিমুখী আক্রমণের ফলে পাকবাহিনী ভোরের দিকে পালিয়ে যায়। এই যুদ্ধে শহীদ হন মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ রবি।
আজকের দিনটি পঞ্চগড়বাসীর জন্য মুক্তির আনন্দ ও গৌরবের প্রতীক। ২৫ মার্চের অন্ধকার থেকে ২৯ নভেম্বরের সেই বিজয়ী ভোর সেই মহান দিন চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
দিবসটি উপলক্ষে আজ সকাল সোয়া ৯টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শহীদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিফলকে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে জেলা প্রশাসন, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন। সকাল সাড়ে ৯টায় বধ্যভূমি চত্বরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ ও দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। সকাল ১০টায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
এসআর